পাবলিক স্পিকিং কিংবা প্রেজেন্টেশন - কীভাবে বাজিমাত করবেন?


...

সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো আমার মনে পড়ে। স্কুলের কোনো এক অনুষ্ঠানে আমাকে হঠাৎ করে স্কুলের হেডস্যার ঠেলে দিলেন মাইকের সামনে। কিছু একটা বলতে হবে। কী তা মনে নাই। কিন্তু এটা মনে আছে, কী ভয়াবহ আতঙ্কে হাঁটু কাঁপছিলো, গলাটা এসেছিলো শুকিয়ে, আর একটি শব্দও মুখ থেকে বেরুচ্ছিলো না। অথবা আরো একটা ভয়াবহ ক্ষণ, এসএসসি পরীক্ষার পরে স্ট্যান্ড করার কারণে বিটিভিতে সাক্ষাতকার। ঘুরেফিরে আমার উপরে ক্যামেরাটা পড়ামাত্র মগজ আর দেহ হয়ে গেলো অবশ, কোনোমতে হড়বড় করে কিছু একটা বলার পরেই ক্যামেরাটা সরতেই যেন জীবন ফিরে পেলাম। কপাল ভালো লোডশেডিং এর মৌসুম হওয়াতে খুব বেশি কেউ সেই ভয়াবহ সাক্ষাতকারটা দেখেনি সেবার। মান সম্মান অল্পের জন্য হয়নি ফালুদা!

ঘটনা আসলে পাবলিক স্পিকিং এর ভীতি, জনসমক্ষে কিছু বলার আতঙ্ক। এই আতঙ্কে ভুগেন না এমন মানুষ আছে কি? বহু বছর পরে এখন আমি শিক্ষক হিসাবে প্রতিদিন প্রায় ৩ ঘণ্টা এক ক্লাস শিক্ষার্থীর সামনে কথা বলি, তারা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে সেই দৃষ্টিকে অগ্রাহ্য করে বলি। এবং এখন আমি আত্মবিশ্বাসী যে, দুনিয়ার যেকোনো বিষয়ে কথা বলতে দিলে যতক্ষণ চান ততক্ষণই বকবক করতে পারবো।

হাসি মুখে যা বলবেন, বেয়াড়া রকমের অসংলগ্ন কথা না হলে ধাওয়া খাবেন না তার জন্য।

তো এই পরিবর্তনের রহস্যটা কী? অধ্যাপনা পেশায় থাকার কারণে কথা বলতে বলতে এক সময়ে পাবলিক স্পিকিং এর মূল কয়েকটা ব্যাপার বুঝতে পেরেছি। আপনিও পারবেন। খুব সহজ।

১) নার্ভাস হবেন না -

বলা তো খুব সহজ, আসলে কীভাবে নার্ভাসনেস কাটাবেন? "ডরাইলেই ডর", এই মন্ত্রটা পড়েন, জপ করেন।

২) এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবেন না -

এক জায়গায় স্থবির হয়ে থাকার বদলে একটু নড়াচড়া করেন, হাত পা নেড়ে কথা বলেন। ঐটা করতে গিয়ে যে মনোযোগ দিতে হবে, তা করতে গিয়ে আপনি একটু অন্যমনস্ক হবেন। নার্ভাস ভাবটা ভাবার সময় পাবেন না।

৩) দাঁত কেলিয়ে হাসুন -

হাসি না পেলেও হাসি হাসি চেহারা করুন। আমাদের মনকে বোকা বানানো খুব সহজ, মুখটা হাসি হাসি করলে মনের কাছে "এখন হাসতে হবে" এই টাইপের মেসেজ মনে হয় যায়, নার্ভাসভাবটা কাটাবার এ এক ভালো উপায়।

৪) এক জায়গায় তাকিয়ে থাকবেন না -

ড্যাব ড্যাব করে তাকানো দর্শকের অভাব নাই। কোনো একজনের দিকে তাকিয়ে থাকলে একটু পরেই ভয় পেয়ে যাবেন। বিশেষ করে গুরুস্থানীয় কারো দিকে। তাই সবার দিকে তাকান। ঘুরে ফিরে।

৫) রচনা শেখার মহাপ্রয়োগ -

আমি এসএসসি পরীক্ষার সময়ে ১টি মাত্র রচনার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ক্যামনে কী? আসলে রচনার একটা কমন ফরমুলা বের করে নিয়েছিলাম, সেই রচনা গরু রচনাই হোক কিংবা সময়ের মূল্য, শুরুর বাক্য এক, পরের অংশের কথাবার্তাও এক, এবং শেষের অংশটাও এক। খালি মাঝে রচনা বুঝে গরুর উপরে কিংবা সময়ের উপরে কিছু একটা। পাবলিক স্পিকিং ও তাই। ভাষণের একটা কমন ফরম্যাট ঠিক করে রাখেন। তার পর যথাস্থানে যা দরকার যোগ করে দেন। কয়েকবার এইভাবে বলার পরে আর সমস্যা হবে না। আমার স্কুলের প্রয়াত প্রধান শিক্ষক খালেক স্যার যেমন সব ভাষণ শুরু করতেন "আইজকের এই মহতি সভায় ... ইত্যাদি ইত্যাদি"। সেরকম একটা ফরম্যাট ঠিক করে কয়েকবার অনুশীলন করে ফেললেই ব্যাপারটা আয়ত্বে আসবে।

৬) না জানলেও সমস্যা আছে কি? -

বান্দরবানের পশুপাখি কিংবা ছাগলনাইয়ার ছাগলের উপরে আপনি কি তেমন কিছুই জানেন না? স্বীকার করেই নেন সেটা কথায়। এর পাশাপাশি যা জানেন, তা নিয়ে কিছু বলে ফেলেন। বলার কায়দাটাই আসল। হাসি মুখে যা বলবেন, বেয়াড়া রকমের অসংলগ্ন কথা না হলে ধাওয়া খাবেন না তার জন্য।

এবারে কি সাহস ফিরবে আপনার জনসমক্ষে কথা বলতে? অবশ্যই ফিরবে। ১০০% নিশ্চয়তা দিতে পারি। চেষ্টা করেই দেখুন। আজকেই।