টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনা: কীভাবে পাবেন কাজ করার সময়?


...

গবেষণার জন্য একটা বড় ব্যাপার হলো সময় ব্যবস্থাপনা তথা Time Management। স্বীকার করুন বা না করুন, আপনার হাতে সময় সীমিত। গবেষণার জন্য খেয়াল করে সময় ব্যবস্থাপনা না করলে আপনি সময় মতো গবেষণার কাজ শেষ করতে পারবেন না, এই ঝুঁকি থাকে।

কবি বলেছিলেন, সময় কোথায় সময় নষ্ট করার। গবেষণার কাজে সময়ের সদব্যবহারের দিকে নজর রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত যদি কাজ করতে পারেন, তাহলে অল্প সময়ে অনেক কাজ করতে পারবেন, আর আপনার গবেষণার পরিধিও বেড়ে যাবে অনেক।

নিজে একঘেয়ে কাজ না করে খেয়াল করে দেখুন, সেটা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে সময়টা আপনি অন্য কাজে লাগাতে পারেন কি না।

গবেষণার জন্য সময় ব্যবস্থাপনা করতে হলে যে বিষয়গুলা খেয়াল রাখতে হবে তা হলো - 

(১) নিয়ম করে গবেষণা করার সময় নির্ধারণ —

প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় গবেষণার জন্য বরাদ্দ করুন। হতে পারে সেটা আধা ঘণ্টা, অথবা হতে পারে ৫ ঘণ্টা। কিন্তু নিয়মিতভাবে রুটিন করে গবেষণার জন্য সময় বরাদ্দ করতে হবে।

(২) লেখার সময় —

দৈনিক একটা সুবিধাজনক সময়কে আপনার লেখার সময় হিসাবে নির্ধারণ করে রাখুন। সেই সময়টাতে অন্য সব বাধাবিপত্তি দূরে রাখুন, ফোন বন্ধ করে এবং ইন্টারনেট অফ করে কেবলই লিখুন। লেখা আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি, তাই লেখার অনুশীলন প্রতিদিনই করতে হবে।

(৩) গুছিয়ে কাজ করুন —

সবকিছু ভালো করে গুছিয়ে কাজ করুন। গুছিয়ে কাজ করলে শুরুতে সময়টা বেশি লাগলেও পরিণামে অনেক কম সময় লাগবে। লেখালেখি ছেড়া কাগজে না করে বাঁধানো খাতায় বা নোটবুকে করুন।

(৪) ডেইলি ক্যালেন্ডার অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার —

প্রতিদিনের কাজ, মিটিং, আপনার নানা ডেডলাইন — এসবের হিসাব রাখতে হলে আপনাকে প্রযুক্তির দ্বারস্থ হতে হবেই। সেজন্য মোবাইল ফোনে ক্যালেন্ডার অ্যাপ অথবা ওয়েবে গুগল ক্যালেন্ডার ব্যবহার করুন। এবং সেখানে সবকিছুর পরিকল্পনা রাখার অভ্যাস করে তুলুন।

(৫) সবকিছুর জন্য সময় বের করুন —

বিনোদন, সবার সাথে যোগাযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলা — এসব কিছু অবশ্যই করবেন, সেজন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে রাখুন। যাতে করে গবেষণার সময়ে অন্য কিছুই করার দরকার না হয়।

(৬) মাল্টিটাস্কিং নয়, সিংগল টাস্কিং করুন —

এক সাথে একগাদা কাজ করে সব দ্রুত শেষ করার অভ্যাস যদি থাকে আপনার, তবে জলদি সেই অভ্যাস ছাড়ুন। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ আসলে এক সাথে একাধিক কাজ করা অর্থাৎ মাল্টিটাস্কিং ঠিক মতো করতে পারে না কখনোই। তাই ভালো করে কাজ করতে গেলে সব সময়ে একটা কাজই একবারে করবেন, একই সাথে দুই নৌকায় পা দেয়ার দরকার নাই।

(৭) দ্রুত পড়া ও লেখা অভ্যাস করুন —

গবেষক হিসাবে আপনার অনেকটা সময় কাটবে পড়া ও লেখার কাজে। সেজন্য যদি এই দুইটা কাজ দ্রুত করতে পারেন, অনেকটা সময় বাঁচবে। দ্রুত পড়ার জন্য আসলে অনুশীলন করা লাগে। পড়ার সময়ে আপনি বার বার হোঁচট খেয়ে পড়েন কিনা খেয়াল করে দেখুন। মানে একটা বাক্য পড়ার সময়ে কোনো শব্দ থেকে আগের শব্দে আবার ফিরে যান কিনা অথবা একটানে না পড়ে একাধিকবার আগু-পিছু করে পড়ছেন কিনা তা দেখুন। যদি তা করে থাকেন, তাহলে আস্তে আস্তে সেই দোষটা কাটাবার চেষ্টা করে দেখুন। আর ইংরেজি বাক্য পড়ার সময়ে and, is, the, a, an, to, for এসব অনেক pronoun preposition, conjunction, এসব ধরণের শব্দ না পড়লেও চলে। একটু অভ্যাস করলে পড়ার সময়ে এসব শব্দ টপকে খুব দ্রুত একটি বাক্য এক টানে পড়তে পারবেন, বুঝতেও পারবেন। ইন্টারনেটে দ্রুতপঠনের নানা টিউটোরিয়াল আছে, সেগুলা পড়ে এই কৌশলটা রপ্ত করে নিতে পারেন। আর দ্রুত লেখার জন্য আসলে দ্রুত টাইপ করাটা রপ্ত করতে হবে। যতো দ্রুত লিখতে পারবেন, ততো বেশি লেখা হবে, কাজও আগাবে দ্রুত।

(৮) কাজ আউটসোর্স করে দিন —

নিজে একঘেয়ে কাজ না করে খেয়াল করে দেখুন, সেটা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে সময়টা আপনি অন্য কাজে লাগাতে পারেন কি না। এতে কিছুটা পয়সা খরচ হলেও যে সময়টা বাঁচবে, তা অমূল্য।

(৯) ব্যাকআপ রাখুন সবকিছুর —

সময় বাঁচাবার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো কোনো কাজ যেন দুইবার করা না লাগে, সেইটা খেয়াল রাখা। সেজন্য আপনার সব কাজ ব্যাকাপ করে রাখুন। কম্পিউটারে যখন লিখবেন, এমন ডাইরেক্টরিতে সেই ডকুমেন্টটি সেইভ করে রাখুন, যেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাকাপ থাকবে। ড্রপবক্স, OneDrive এরকম নানা স্টোরেজ সার্ভিস এর সাহায্য নিতে পারেন এজন্য। এছাড়া প্রতিদিন আপনার লেখাকে ব্যাকাপ করে রাখুন একাধিক জায়গায়। তাতে করে আপনার ডেটা কিংবা রিপোর্ট কখনো হারিয়ে ফেলে/ডিলিট হয়ে গিয়ে বহুদিনের কাজ হারাবার সম্ভাবনা থাকবেনা। সময় বাঁচানোটা এক রকমের আর্ট — একটু চেষ্টা করলেই দ্রুত কাজ করা এবং নানাভাবে সময় বাঁচাতে সক্ষম হবেন।

(লেখাটি আমার বই গবেষণায় হাতে খড়ি থেকে নেয়া। বাংলা একাডেমীর চরম খামখেয়ালির কারণে আমার প্রকাশক আদর্শ প্রকাশনী বইমেলায় থাকতে পারেনি। তবে বইটি পাওয়া যাবে রকমারিতে, আর নীলক্ষেতে আছে মানিক লাইব্রেরী অনলাইন এ)। প্রবাসী পাঠকেরা বইটি পাবেন আমাজন কিন্ডল এ। আর বইয়ের অনেক লেখাই দেয়া আছে আমার ফেসবুক টাইমলাইনে বা বইয়ের পেইজে)।