আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষায় বয়স কোনো বাধা নয়


...

নানা দৌড়-ঝাঁপের পর আমি নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের কানাডার সীমান্তবর্তী শহর বাফেলোতে বাফেলো স্টেট কলেজে ভর্তি হই। দেশে শেষ করে আসা চল্লিশ ক্রেডিটের মধ্যে এ কলেজ আমার চৌত্রিশ ক্রেডিট গ্রহণ করে। যার ফলে আমি শিক্ষা জীবনের এক বছরের মতো সময় নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যাই। এ চৌত্রিশ ক্রেডিট গ্রহণ না করলে আবার প্রথম থেকে পড়াশোনা শুরু করতে হতো।

ভালো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আমেরিকায় সুযোগের অভাব নেই। এখানে আসার পর এত সুযোগ-সুবিধা দেখে আমি খুব অবাক হয়েছি। অনেক সময় এত সুযোগ-সুবিধা বরং কোনো সিদ্ধান্ত নিতে আরো চিন্তায় ফেলে দেয়। বাংলাদেশে সাধারণত প্লে গ্রুপ কিংবা প্রথম শ্রেণি থেকে আমাদের শিক্ষা জীবন শুরু হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে এক ক্লাসের পর আরেক ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে থাকি। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনার জন্য অনেকে এক, দুই বছর বিরতি দিয়ে থাকি হয়তো।

আমাদের মধ্যে ছোটোবেলা থেকেই বয়সের হিসাব মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য বয়সের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

এ রকম ধারাবাহিকভাবে এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে ওঠার প্রচলন আমেরিকায় একটু ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ-কেউ পঞ্চম শ্রেণির পর কয়েক বছর বিরতি দিলেও আবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে। দ্বাদশ শ্রেণির পর কয়েক বছর বিরতি দিয়েও কেউ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা হাই স্কুল শেষ করে সাথে সাথে কলেজে না গিয়ে বিরতি দিয়ে কলেজ শুরু করে থাকে। উল্লেখ্য, আমেরিকায় ভার্সিটি বা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলেজ বলেই সম্বোধন করা হয়।

বাংলাদেশে ইন্টারমিডিয়েটের পরপরই সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। ভর্তিযুদ্ধের বৈতরণী পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মোটামুটি চার বছরের মধ্যে অনার্স পাস করতে হয়। সেশন জটের হিসাব বাদ দিয়ে, কেউ যদি চার বছরের মধ্যে পাস করে বের হতে না পারে তাহলে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অথচ আমেরিকায় যার যখন ইচ্ছা কলেজ থেকে ড্রপ আউট হয়ে যাচ্ছে। দেখা যায় এক সেমিস্টার ক্লাস করার পর আর দুই-তিন বছরও হয়তো তার কোনো খোঁজ নেই; আবার হঠাৎ করে এসে ক্লাস করা শুরু করে দিয়েছে। চার বছরের মধ্যে গতানুতিকভাবে ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করতে হবে এ রকম কোনো ধরাবাঁধা নেই।

এখানে কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। অনার্সের ক্লাস করতে গিয়ে আপনার সাথে ষাট বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সের কাউকে দেখলেও অবাক হয়ে যাওয়ার মতো কিছু নেই। বরং এক ক্লাসে নানা বয়সের শিক্ষার্থী দেখাই বেশি স্বাভাবিক। কেউ হয়তো মাত্র হাই স্কুল শেষ করে এসেছে আবার কেউ পনেরো-বিশ বছর চাকরি করার পর আবার কলেজে ক্লাস করতে আসছে। বয়স এখানে কোনো ফ্যাক্ট না।

বাংলাদেশে যখন-তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তো দূরের কথা ভর্তি হওয়ার পর এত বছর বিরতি দেওয়ার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। আমাদের মধ্যে ছোটোবেলা থেকেই বয়সের হিসাব মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য বয়সের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। যেকোনো বয়সে যে কেউ যেকোনো কিছু এক্সপ্লোর করার ক্ষমতা রাখে। এ কথা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হয়তো ভুল প্রমাণিত হয়। কারণ একটা নির্দিষ্ট বয়স কিংবা সময়ের পর অনেক সুযোগের, সম্ভাবনার দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়।